২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার | বাংলা কনভার্টার
মোঃ সাব্বির হাসান.
সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের একটি পোস্ট পেয়ে অসুস্থ আবুল খায়ের (৪৭) কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসক উম্মে তানজিয়া সালমা।
গত ১৯ শে জানুয়ারী ২০১৯ সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে সেপ্টোস ফোরের সভাপতি শামীম আহমেদ একটি পোস্ট দেন। জানা গেছ শামীম আহমেদ ঐদিন একটি চায়ের দোকানে চা খেতে গেলে তিনি দেখতে পান আবু সায়েম (০৯) নামের একটি ছেলে নিজে হাতে চা প্রস্তুত করে ক্রেতাদের মাঝে পরিবেশ করছে। এতে শামীম আহমেদের মনে কৌতুহল জাগায় ছেলেটিকে কাছে ডেকে জানতে চাইলেন কেন সে একাকী চায়ের দোকানে কাজ করছে?
ছেলেটি তার আঞ্চলিক ভাষায় যা বললো তার অর্থ হলো এই যে, "সে খেজুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। ওরা তিন ভাই-বোনের মধ্যে সায়েম সবার ছোট। তার ভাই সবুজ (১২) সপ্তম শ্রেণী এবং একমাত্র বড় বোন বিউটি (১৭) সদরপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণীতে অধ্যায়ন করছে। তাদের হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনের ব্যক্তি ছিলেন অসুস্থ পিতা আবুল খায়ের। পরপর তিন তিন বার আবুল খায়েরের পেটে অস্ত্রোপচার করে পেটের পাথর অপসারণ করা হয়। বর্তমানে তিনি বেশ অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। পিতার অসুস্থতায় পরিবারে সর্বগ্রাসী দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে আবুল খায়েরের চিকিৎসার খরচ যোগাতে গরু, ছাগল বিক্রি করে এবং বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋন নিয়ে প্রায় ১৫০,০০০ ( এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা খরচ করা হয়েছে। এদিকে সায়েমের বড় ভাই অনেকটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী । তাইতো সে নিজের ও পরিবারের জন্য আহার যোগাড় করতে বাধ্য হয়েই বাবার দোকানে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। এরপর শামীম আহমেদ তাঁর ফেসবুক টাইম লাইনে একটি পোস্ট দেন।
তাঁর পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো, "ছবিতে ছোট ছেলেটা চা বানাচ্ছে। ৪/৫ দিন হলো ওর বাবার অপারেশন হয়েছে। ঘরে পরা অসুস্থ বাবা। আপাতত সংসারের হাল ওকেই ধরতে হয়েছে। কথা হলো ওর সাথে। খুব ভদ্র ও বিনয়ী ছেলে। শুনে ভালো লাগলো, ও নাকি স্কুলেও পড়ে। সকালে সদরপুর মাদ্রাসা মার্কেটের পেছনে চা খেতে গিয়ে ছবিটা তুলেছিলাম। জীবনের প্রয়োজনে সংসারের হাল কিভাবে ধরতে হয় ওকে দেখে বুঝলাম।"
ক্ষুদে চা বিক্রেতা সম্বলিত পোস্ট টি অল্প সময়ের মধ্যেই নজরে আসে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক উম্মে তানজিয়া সালমা স্যারের। তাইতো তিনি পোস্টটিতে মন্তব্য করেন, "ছেলেটিকে আগামীকাল বিকাল ৩ঃ ৩০ টায় আমার কাছে নিয়ে আসতে পারবে?"
এরপর ডি সি স্যার সদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূরবী গোলদারকে ফোন করেন। তিনি বলেন, " আবু সায়েম এর পরিবারের সাথে দেখা করে খোঁজ খবর নিয়ে আবু সায়েমকে আমার কাছে নিয়ে আসুন।"
২১শে জানুয়ারী ২০১৯ সকাল ১০ টায় সেপ্টোস ফোর এর উপদেষ্টা রিপন হাওলাদার এবং সভাপতি শামীম আহমদকে সাথে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূরবী গোলদার সায়েমদের বাড়িতে উপস্থিত হন। এবং তিনি নিজ চোখে সায়েমদের পরিবারের পরিস্থিতি অবলোকন করেন। পরিবারের সকলের সাথে কথা বলে সাহায্যের আশস্ত করলেন। এরপর রিপন হাওলাদার, শামীম আহমেদ ও সায়েমকে সাথে করে উপজেলা কর্মকর্তা পূরবী গোলদার ডিসি স্যারের সাথে দেখা করলেন।
তিনি সায়েমকে দেখেই মায়ের স্নেনে বুকে আগলিয়ে নিলেন এবং বিস্তারিত সব খবরাখবর নিলেন। ছেলেটির সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে গেলেন। উপস্থিত সকলের সাথে কথা বলার পর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন,
১) সায়েমদের দোকানে অন্য একজন লোক কাজ করবে তার বেতন আমরা বহন করবো।
২) সায়েম আগামীকাল হতে স্কুলে যাবে এবং সায়েমের বাবার চিকিৎসা দায়িত্ব আমরা আমরা বহন করবো।
৩) আবুল খায়ের সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই তাদের পরিবারকে সাহায্য করা হবে।
ডি সি স্যারের এই ঘোষণার মাধ্যমে সায়েমের মুখে সুখের হাসি ফোটে। এবং পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি তাঁর সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা পায়। অন্যদিকে সায়েমদের পরিবার জুড়ে শান্তির আগমণি ধ্বনি বইতে থাকে।