www.sadarpurkhobor.com

২৯ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার | বাংলা কনভার্টার

শিরোনাম:

সদরপুরের অসহায় রুপজান বেগমের শেষ চাওয়া দু’মুঠো ভাত ও মাথা গুজার ঠাই


 মোঃ মাসুদ হাওলাদার/সাব্বির হাসান.    ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ৪:১৯    জাতীয়



একজন রুপজান বেগম।  আজ অন্ন ও বাসস্থানের জন্য ছুটে চলছেন বিরামহীন ভাবে। বয়সের ভারে এখন তাঁর প্রেীঢ় শরীর নড়বড়ে।  সহায় সম্বলহীন রুপজান বেগমের বয়স ৮৫ বছর।  স্বামীকে হারিয়েছেন প্রায় বিশ বছর আগে। এরপর ঠাই মিলে ছোট মেয়ের রোকেয়া বেগমের (৪০) বাড়িতে। রোকেয়ার স্বামী মোঃ ইদ্রিস বেপারি (৫০) সেও একজন দিন মজুর। ইদ্রিস বেপারি তাঁর চার (৪) সন্তানকে নিয়ে কোন রকম দিনপাত করলেও নিজের শাশুড়িকে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে স্থান দিয়েছিলেন স্ব-গৃহে। রুপজান বেগমের এক (১) ছেলে ও চার (৪) মেয়ে। ছোট মেয়ে রোকেয়া ছাড়া অন্য কেউ তাঁর খোঁজ খবর নেয়নি।
ছোট মেয়ের ঘরে এভাবে কোন প্রকারে খেয়ে না খেয়ে মোটামুটি ভাবে দিন চলে যেত রুপজান বেগমের। কিন্তু বাধ সাধে নির্মম নিষ্ঠুর নিয়তি।
গত দুই বছর আগে মেয়ের জামাতা মোঃ ইদ্রিস বেপারি অটোবাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর ভাবে আহত হন। এতে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এরপর শুরু হয়ে যায় পরিবারে নিদারুন অভাব অনাটন। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে শুরু হয় জীবন নামের রেলগাড়ি। ইদ্রিস বেপারির জরাজীর্ণ ঘরটি বর্তমানে প্রায় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। ইতিমধ্যে ঘরটি বসবাসের জন্য একেবারে অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। তাই বাধ্য হয়ে রুপজান বেগম প্রায় এক বছর ধরে এক প্রতিবেশীর বাড়ি বাড়ি রাত্রিযাপন করে। যেখানে যাকে কাছে পান তাকেই জড়িয়ে ধরে নিজের আকুতি জানাতে।
নানান অবহেলা উপেক্ষা করে অন্যের বাড়ি রাত্রিযাপন করা এই বৃদ্ধা মাতার জন্য অনেকটা দুর্বিপাকের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে!
এক সময় রুপজান বেগমের স্বামী সংসার সবই ছিল। মাত্র তের বছর কিশোরী বয়সে বিয়ে হয়েছিল চরকুমারিয়ার মজিদ মুন্সির সাথে। বিয়ে হয়েছিল  সে সময় বেশ ধুমধামের সাথেই। বেনারশি শাড়ির সাথে কানের ফুল মার্কি, গলায় দানা তাবিজ, নাকের নাকফুল এবং হাতে রুপার চুড়ি। সেবারে পুরো গ্রামে সাড়া পড়ে গিয়েছিল রুপজান ও মজিদের বিয়ে নিয়ে।
কতইনা আনন্দ উল্লাস, হাসি ঠাট্টা, মান অভিমানে কেটেছে সেদিন গুলো। সেই হারানো অতীত তা স্মৃতিচারণ করতেই দু,চোখ তাঁর জলে ভরে আসে রুপজানের। স্বামীর সাথে খুনসুটি তাঁর লেগেই থাকতো সারাক্ষণ। মজিদ মুন্সি গঞ্জে গেলে পথ পানে চেয়ে থাকতেন এই রুপজান বেগম। এই হারানো অতীতকে যেন কিছুতেই ভুলে থাকতে পারছেন না তিনি। থেমে থেমে জীবন চলারক্ষনে আরও বেশী মনে করিয়ে দিচ্ছে সেসব অতীত গুলো। তাইতো থেমে থেমে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলেন, "আমার জীবনের শেষে সময় আমি সমাজের বিত্তবান ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছে আমার জন্য একটি ঘর এবং দু,বেলা খাবারের নিশ্চয়তা চাই"। কে শুনবে রুপজানের আহাজারি। রাত যত গভীর হতে থাকে এই শীতে রুপজানও যবুথবু হয়ে ওঠে শীত নামের পাষন্ডের কাছে। অনাহারেও হয় দীর্ঘ রজনী তার।
তিনি আরও বললেন, "আমি আর আগের মতো হাটা চলা ফেরা করতে পারিনা। অনেক সময় লোকদের বাড়িতে নানান কাজ করে দিলে তাঁরা আমাকে খাওয়া থাকার ব্যবস্থা করে দিতো কিন্তু এখন আর শরীর চলেনা চোখেও তেমন দেখিনা পুরো শরীর জুড়ে ব্যথা তাইতো লোকজন আর সেই আগের মতো করে আমাকে ডাকেনা। আমি এখন একটু শান্তিতে মরতে চাই।" কথাগুলো বলেই হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন রুপজান বেগম।
রুপজান জানেনা তার মরনের পর কোথায় তাকে রাখা হবে। একদিন রুপজান চলে যাবে না ফেরার দেশে কিন্তু ভাগ্যের অন্বেষনে সে ফিরে পাবে কি এ সমাজে তার মাথা গোঁজার ঠাঁই? জুটবে কি রুপজানের মুখে অন্ন আহার?
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে আজ রুপজান বেগম তাঁর নিজের জন্য যে আবেদন করেছেন সমাজের বিত্তবান ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছে তা যেন সকলের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয়। এটাই তাঁর জীবনের শেষ আকুতি।


















সংবাদটি এ পর্যন্ত পড়েছেন   708   জন পাঠক

 আরও খবর


















সর্বাধিক পঠিত

শুদ্ধাচারে ফরিদপুরের সেরা ইউএনও হলেন সদরপুরের পূরবী গোলদার
সদরপুরে সেফটি ট্যাংকিতে প্রান গেল স্বামী স্ত্রীর
ফরিদপুরে র‌্যাবের হাতে মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ কামাল হাওলাদার,মেহেদী হাসান ফয়সাল, মোঃ টুলু চৌধুরী আটক
সদরপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরার দায়ে ১৩জেলে কে ১বছর করে কারাদন্ড, নদী থেকে ৮কিশোর আটক
একজন নিক্সন প্রেমি রিপনের রক্তের দাগ...........
সদরপুরে ক্লাশ চলাকাশে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো নবম শ্রেণির ছাত্রী
সদরপুরে সাপের কামড়ে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু
সদরপুরে চাউল বিক্রির অনিয়মে ডিলারের জেল
সদরপুরে ট্রাকের চাকায় নিহত হলো স্কুল ছাত্র সজীব
সদরপুরে মোটর সাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্য আটক-স্থানীয় সংঘবদ্ধদের নাম প্রকাশ