www.sadarpurkhobor.com

১০ মে ২০২৪, শুক্রবার | বাংলা কনভার্টার

শিরোনাম:

সদরপুরে বেগুনের ফলন ভালো হওয়ায় দাম কমলো বেগুনের


 মোঃ সাব্বির হাসান.    ৩ জুন ২০১৮, রবিবার, ২:৫৯    জাতীয়


ছবিঃ ফরিদপুরের সদরপুরের শৌলডুবী এলাকার বাঁধানো ঘাটে ক্ষেত থেকে বেগুন তুলে বিক্রয়ের জন্যে বাজারে স্তুপ করা। বিক্রি শেষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হবে। গতকাল সকালে তোলা ছবি।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা একটি সবজি প্রবণ ও ফসল উৎপাদন এলাকা হিসাবে পরিচিত। মাটির উর্বরতা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ অঞ্চলের সবজি চাষে তেমন কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যায়ের মুখে পতিত হয় না। নিজ জেলার চাহিদা পূরন করে এ অঞ্চলের বেগুন এখন দেশের বিভিন্ন বাজারে রপ্তানি করা হচ্ছে।
অধিক লাভজনক হওয়ায় ধান,গম পাট ছেড়ে বেগুন চাষে বেশ কয়েক বছর ধরে ঝুকছে ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার কৃষকরা। বেগুন চাষ করে একদিকে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে দেশের সবজির চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা রাখছেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী,মাঠ শৌলডুবী,আবুলের মোড়,বাঁধানোঘাট এলাকায় গত ১৫বছর ধরে বিভিন্ন মৌসুমে তাদের জমিতে অন্যান্য ফসল চাষ না করে বেগুন চাষ শুরু করেছেন।
অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার প্রত্যেক কৃষকই সর্বনিম্মে ৫ কাঠা থেকে সর্বোচ্চ দুই বিঘা পর্যন্ত জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। এসব এলাকায় মাঠে মাঠে এখন কেবল বেগুনের ক্ষেত। কৃষকরা বি,পি,হাইব্রিট,আইরেট,সিন্দুরী,সাদা,লাফা জাতের বেগুন চাষ করেছেন। এর মধ্যে ইরি ও বিটি বেগুনের চাষাবাদ বেশী করা হয় অধিক ফলনের আশায়।
উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নসহ ভাষানচর,মানিকদাহ আরও দুটি ইউনিয়নে ও বেগুনের চাষাবাদ শুরু করেছেন কৃষকরা। শৌলডুবী গ্রামের আবুল বাশার জানান, ৪০শতাংশ জমি প্রতিবছর ২০ হাজার টাকায় ১বছরের জন্য লিজ নিয়ে গত তিন বছর ধরে বেগুন চাষ করে তার সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে।  মাঠ শৌলডুবী গ্রামের শাহেদ আলী মোল্যা জানান, তার নিজস্ব এক বিঘা জমিতে করেছেন বেগুনের ক্ষেত। বাঁধানো ঘাঠ গ্রামের জামাল উদ্দিন তার ১০ কাঠা জমিতে এবং ভাষানচর  গ্রামের শাহজাহান খাঁ, মারুফ শিকদার, আজিজ মোল্যা ১৫ কাঠা জমিতে বেগুনের চাষ করেছে।
এসব বেগুন চাষীরা জানিয়েছেন, বেগুন চাষে বোরো আবাদের চেয়ে পানি কম লাগে। সার ও শ্রমিক খরচও অনেক কম। তুলনামূলকভাবে বাজারে মূল্য বেশী পাওয়া যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করার জন্যে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ২০ থেকে ২৫হাজার টাকা।
আরও জানাযায়, পুরো মৌসুমে কয়েক ধাপে বেগুন পাওয়া যায় সর্বোচ্চ বিগা প্রতি ১৫০ থেকে ২০০মন। বর্তমান বাজার অনুযায়ী গড়ে প্রতি মন বেগুন পাইকারী পর্যায়ে বিক্রি করছেন ৪৫০থেকে ৫০০টাকা। খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা লক্ষধিক বিঘা প্রতি জমিতে লাভ করছেন।
যার ফলে যে এলাকায় কোনো দিন সবজি চাষ সম্ভব ছিল না সেখানকার কৃষকরা বেগুন চাষে এগিয়ে এসেছেন। তারা জানান বছর জুড়েই আমরা জমিতে বেগুন চাষ করে থাকি। বেগুন চাষের বিপরীতে আমরা ঝিংগা, লাউ, করলা, মুলা, ফুলকফি, বাঁধাকপি, লালশাক,ফুলশাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করে থাকি।
আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বেগুন চাষের পর বিভিন্ন সবজি চাষের মাধ্যমে কৃষকরা আরও লাভবান হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে জমিতে চাষ ও সার কম দিতে হয়। সেই কারণে সারের খরচও কমে যায় বলে সার্বিকভাবে সবজি চাষের উৎপাদন খরচও কম পড়ে। এতে কৃষকরা বেগুন চাষে অধিক লাভবান হচ্ছে। বেগুন বিক্রি করতে কৃষকদের কষ্ট করে হাটে বাজারে যেতে হয় না। স্থানীয় শৌলডুবী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ,মজুমদার বাজার,সাদিপুর বাজার,বাড়ৈরহাট,নীল মনির বাজার,কৃষ্ণপুর ও বাঁধানোঘাট,পোষ্ট অফিস মোড় নামক এলাকায় প্রতিদিন সকাল-বিকেল হাট বসে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররা এসে হাট থেকে হাজার হাজার মন বেগুন ক্রয় করে বস্তাবন্দি করে দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠায়।
অপরদিকে পাইকারী কাঁচা তরকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে কিনে নগদ টাকা দিয়ে যায়। এতেও কৃষকরা অনেক বেশী লাভবান হচ্ছেন। পাইকারী বেগুন ক্রেতারা জানিয়েছেন, এখানকার বেগুন কিনে নিয়ে তারা ঢাকার কাওরান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ি,দোহার বাজার,নারিশা বাজার,কার্তিকপুর,শ্রীনগর,ভাঙ্গাসহ মাদারীপুর,বরিশাল,খুলনা,সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদুল মিরাজন জানান, এ বছর উপজেলায় সবজিসহ মোট ৫৬০ এর মধ্যে ৩৫০ হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষ হয়েছে। যা গত বছর বেগুন চাষের জমির পরিমান ছিল সাড়ে ৩১৯ হেক্টর। এখানকার কৃষকরা অত্যান্ত পরিশ্রমি এবং চাষাবাদে তারা সরকারের বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক সেমিনারে অংশ গ্রহন করে থাকে। বেগুন চাষ অধিক লাভজনক হিসেবে কৃষকদের নিকট পরিলক্ষিত হয়েছে। কৃষকের সাথে সব সময় অফিসের সাথে যোগাযোগ বিরাজমান থাকে। বিভিন্ন সময় তাদের অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সরকারি সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের কৃষকরা বেগুন চাষে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটিয়েছে যাহা দেখে অন্যান্য ইউনিয়নের কৃষকরা বেগুন চাষে ঝুকছেন। বেগুন চাষে পানি কম লাগে। সেচ খরচ একেবারে নেই বললেই চলে। একদিকে উৎপাদন খরচ কম অন্যদিকে ভালো বাজার মূল্য কৃষকদের বেগুন চাষে উৎসাহিত করে তুলছে। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে তাদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।



সংবাদটি এ পর্যন্ত পড়েছেন   1554   জন পাঠক

 আরও খবর


















সর্বাধিক পঠিত

শুদ্ধাচারে ফরিদপুরের সেরা ইউএনও হলেন সদরপুরের পূরবী গোলদার
সদরপুরে সেফটি ট্যাংকিতে প্রান গেল স্বামী স্ত্রীর
ফরিদপুরে র‌্যাবের হাতে মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ কামাল হাওলাদার,মেহেদী হাসান ফয়সাল, মোঃ টুলু চৌধুরী আটক
সদরপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরার দায়ে ১৩জেলে কে ১বছর করে কারাদন্ড, নদী থেকে ৮কিশোর আটক
একজন নিক্সন প্রেমি রিপনের রক্তের দাগ...........
সদরপুরে ক্লাশ চলাকাশে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো নবম শ্রেণির ছাত্রী
সদরপুরে সাপের কামড়ে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু
সদরপুরে চাউল বিক্রির অনিয়মে ডিলারের জেল
সদরপুরে ট্রাকের চাকায় নিহত হলো স্কুল ছাত্র সজীব
সদরপুরে মোটর সাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্য আটক-স্থানীয় সংঘবদ্ধদের নাম প্রকাশ