www.sadarpurkhobor.com

২১ মে ২০২৪, মঙ্গলবার | বাংলা কনভার্টার

শিরোনাম:

বর্ষার শুরুতেই সদরপুরে দুয়াইর বানাতে ব্যস্ত কারিগররা


 মোঃ সাব্বির হাসান.    ২৩ জুন ২০১৮, শনিবার, ২:৩২    জাতীয়


চাঁই বুছনা তৈরীতে ব্যস্ত সদরপুরের ঢেউখালী ইউনিয়নের পিয়াজখালী গ্রামের শেখ ফরিদ।


বর্ষা মৌসুম শুরুতেই ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী,চরনাছিরপুর,চরমানাইর ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে চাঁই(দুয়াইর) বানানোর কাজে এ অঞ্চলের শিল্পিরা কাজ করছেন। বিশেষ করে ঢেউখালী ইউনিয়নে এ চাঁই শিল্পের কাজ বেশী হচ্ছে। নদী-নালা, খাল-বিল এলাকায় বর্ষার পানি প্রবেশ করায় মাছ শিকার করার জন্য তৈরি হচ্ছে এ চাই(দুয়াইর)। মাছ ধরার অপেক্ষাকৃত সহজ কৌশল চলাচলের পথে চাই পেতে রাখা হয়। এ মৌসুমে তাই চাই তৈরি আর কেনা বেচায় ধুম পড়ে যায়।  আগের মত প্রাচুর্য না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে তিন মাস ইউনিয়ন গুলোর শিল্পীরা চাই তৈরি করে থাকেন। বর্তমান বর্ষা মৌসুমে নদী-নালা, খাল-বিলে এখন  নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এসব মাছ ধরতে তাদের চলাচলের পথে পেতে রাখা হয় চাই। তিন ইউনিয়নের  বিভিন্ন নদ বেষ্ঠিত গ্রামের  প্রত্যেকটি পরিবারই কমবেশি চাই পেতে মাছ ধরে থাকে। তাই এখানকার হাট বাজার গুলোতে এখন চাই কেনা বেচা হচ্ছে। আর প্রস্তুতকারীরাও রাত দিন পরিশ্রম করে তৈরি করা চাই বিক্রি করছে স্থানীয় হাট বাজারগুলোতে। এখন আষাঢ় মাসের শুরু, আর আষাঢ় বাদল নামে নদী বড় বড়, খাল-বিল, নদী-নালায় নতুন পানি উঠতে শুরু করেছে। সেই সাথে দেশীয় মাছের প্রজনন হওয়ায় মাছের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। দেশীয় মাছের স্বাদ নিতে গ্রামের খালে এবং উম্মুক্ত জলাশয়ে চাই-বুছনা (এক ধরনের মাছ ধরার ফাঁদ) পেতে মাছ ধরছে চরাঞ্চলের মৎসজীবি ও নানা পেশার মানুষ।
চাহিদার সামাল দিতে এবং মৌসুমী আয়ে চাই-বুছনা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। শুধু ঘরের কর্তা ব্যক্তি নয়, বুনন কাজে সহযোগিতা করছে স্ত্রী, পুত্র, ভাই, বৃদ্ধ মা ও বাবা। তাঁদের সহযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে যায় এ বুননের কাজ। এমনটাই জানালেন ঢেউখালী ইউনিয়েনের রাম সন্দরের ডাঙ্গী গ্রামের কারিগর শেখ মোহন(৬৫) বলেন, বাবুল মিয়া(৫৫), মাঘ মাসে চোখের দৃষ্টিতে অনুমান নির্ভর করে একশ পঞ্চাশ থেকে দেড়’শ টাকার প্রতিটি বাঁশ কিনতে হয়। এরপর বাঁশ সাইজমত কেটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে শলা তৈরী করতে হয়। প্রতি সপ্তাহের ৩ দিন বাঁশ থেকে শলা তৈরী করি এবং বাকি ৪ দিন রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিটি বুছনা তৈরীতে ২শ ২০ থেকে ২শ ৫০ টি শলা লাগে। একটি ভালো বাঁশ থেকে ৩ টি বুছনা তৈরী করা যায়। মাঘ মাস থেকে এ কাজ শুরু করেছি আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলবে। বাজারের সব চেয়ে বড় মহাজন ও এ শিল্পের ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ(৫০), আমার এ কাজে প্রায় এলাকার ২০/২৫জন শ্রমিক দিনরাত কাজ করছে। প্রতিদিন তাদের চাই প্রতি উৎপাদন হিসাবে টাকা দিতে হয়। একজন শ্রমিক গড়ে প্রতিদিন ১০থেকে১২টি চাই বুনে থাকে। মূলধনের অভাবে স্থানীয় একটি এনজিও এর নিকট থেকে অনেক ছোট ব্যবসায়ীরা ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে প্রতি বছরই কাজ করি। একেকটি বুছনা বিক্রি করি ২৬০ টাকা থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত। পিয়াজখালী বাজার এলাকায় সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে ৬০ টি বুছনা নিয়ে বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে অন্য বিক্রেতারা পাইকারী কিনে নেয়। সংসারের খরচ, পিতা-মাতার চিকিৎসা খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশুনার খরচ এবং ঋণ শোধ করে সব মিলিয়ে বছরের আয়-ব্যয় সমান সমান থাকে। সরকারী সহায়তায় সহজ শর্তে এবং বিনা সুদে ঋণ পেলে একটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর আশা প্রকাশ করেন দেলোয়ার ও তার পরিবার। শুধু দেলোয়ার নন, এভাবে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে এ মৌসুমী আয় থেকে। বেচা বিক্রিও করছে কারিগররা। এছাড়াও সাড়েসাতরশি বাজার, কৃষ্ণপুর হাট,চরবলাশিয়া বসে চাই বুছনা বিক্রির হাট। জেলার বাহির থেকেও আসে বিক্রেতারা। ভাঙ্গার মাধবদি  থেকে আসা চাই বিক্রেতা মহিউদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, প্রতিটি চাই গড়াসহ ২৫০থেকে ৩শ টাকা করে বিক্রি করছি। গড় বাদে বিক্রি করছি ১শ টাকা। নিজে চাই না বানিয়ে কারিগরদের কাছ থেকে কিনে এনে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করে সংসার ও ছেলে-মেয়ের লেখা পড়ার খরচ চালানোর জন্য এ মৌসূমী ব্যবসা করেন বলে জানান তিনি। পিয়াজখালী গ্রামে চাই বুছনা তৈরীর কারিগর মোঃ শেখ জানান, গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে বাঁশ কিনে চাই বুছনা বানানোর কাজ করি। ১৫০থেকে ২০০ টাকায় ১টি বাঁশে ২টি চাই অথবা ১টি বুছনা তৈরী করা সম্ভব হয়। এতে পূর্ণ ১দিন সময় লাগে। একা কাজ করে আগাতে পারিনা। তাই স্ত্রী ও স্কুলগামী ৫ম শ্রেণির ছাত্র নাজমুলও কাজে সহায়তা করে। একটি চাই সর্বোচ্চ ২শত টাকায় এবং বুছনা ৪৫০ থেকে ৫শ টাকায় বিক্রি করি। চাহিদা মত বাঁশ কিনতে না পাওয়া এবং চাই বুনানোর সুতোর দাম বৃদ্দি বলে হতাশা প্রকাশ করেন তারা। আরেক চাই প্রস্তুতকারী জানান, মৌসুম শুরুতেই সময়মত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল ও ডোবানালায় পানি কম থাকায় মাছের শূন্যতা দেখা দিয়েছে। এতে চাঁইয়ের চাহিদা বিগত বছর গুলোর চেয়ে অনেক কম। তাছাড়াও বাঁশ, সুতা ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের চেয় লাভ হচ্ছে কম। পুঁজি না থাকায় সুদ ব্যবসায়ী ও এনজিওর ঋণ নিয়ে চাঁই তৈরি করতে হয়। এই শিল্পের সুদমুক্ত সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হলে এই শিল্প হাজার পরিবারের আয়ের অবলম্বন হিসেবে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারী সহায়তায় সহজ শর্তে এবং বিনা সুদে ঋণ পেলে একটু ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহে স্বচ্ছল হতে পারতো।  আমরা ঘরে বসে ক্ষুদ্র পরিসরে মৌসূমী এ শিল্পের কাজ করছি। আমাদের পণ্য (চাই-বুছনা) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের আওতায় নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান কারিগররা।


সংবাদটি এ পর্যন্ত পড়েছেন   896   জন পাঠক

 আরও খবর


















সর্বাধিক পঠিত

শুদ্ধাচারে ফরিদপুরের সেরা ইউএনও হলেন সদরপুরের পূরবী গোলদার
সদরপুরে সেফটি ট্যাংকিতে প্রান গেল স্বামী স্ত্রীর
ফরিদপুরে র‌্যাবের হাতে মোঃ জাকির হোসেন, মোঃ কামাল হাওলাদার,মেহেদী হাসান ফয়সাল, মোঃ টুলু চৌধুরী আটক
সদরপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরার দায়ে ১৩জেলে কে ১বছর করে কারাদন্ড, নদী থেকে ৮কিশোর আটক
একজন নিক্সন প্রেমি রিপনের রক্তের দাগ...........
সদরপুরে ক্লাশ চলাকাশে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো নবম শ্রেণির ছাত্রী
সদরপুরে সাপের কামড়ে স্কুল ছাত্রের মৃত্যু
সদরপুরে চাউল বিক্রির অনিয়মে ডিলারের জেল
সদরপুরে ট্রাকের চাকায় নিহত হলো স্কুল ছাত্র সজীব
সদরপুরে মোটর সাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্য আটক-স্থানীয় সংঘবদ্ধদের নাম প্রকাশ