২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার | বাংলা কনভার্টার
ভালো বাসেন অবহেলিত মানুষ আর অবহেলিত চরাঞ্চল কে। তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্যে নিজেকে নিয়ে ভাবেন এমনি একজন আতিকুর রহমান। ছোট বেলা থেকেই যার প্রত্যান্ত পশ্চাদ চরাঞ্চল উন্নয়নের জন্যে কাজ করার আগ্রহ। আতিকুর রহমানের বাড়ি চরমানাইর ইউনিয়নের চরবন্দর খোলা গ্রামে। পেশায় তিনি একজন ঠিকাদার। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় পুত্র। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজ এ। সেখান থেকে তিনি বি.এ পাশ করেন।
পদ্মা আড়িয়াল খাঁ বিধৌত রাক্ষুসে নদের বুকে গড়ে ওঠা একটি ইউনিয়নের নাম চরমানাইর। প্রায় ৬হাজার জনগোষ্ঠীর বসবাস অঞ্চল। এখানকার মানুষের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে জীবন চালাতে হয়। সবুজ সমারেহ আর ফসলি জমির উর্বরতাবৃদ্ধি থাকায় সারা বছর চরে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করে স্বাবলম্বী হতে হয় তাদের। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে চরের রাস্তা ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লেগে যায়। দুপুরে বেশ রোদের উপদ্রব দেখা যায়। শুকনো বালু আর বাতাসে চলাচল ব্যাহত হতে হয়। আবার কখনো এ গ্রাম থেকে ও গ্রাম যেতে নৌকার সাহায্য নিতে হয়। সদরপুর উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১০কিলোমিটার পাকা সড়ক পাড় হয়ে দরগা বাজার নৌঘাটে যেতে হয়। এর পর নদ পাড় হলেই ইউনিয়নটির পথযাত্রা শুরু হয়। শুরুতেই চরের সোনালী স্বপ্ন বাদামে দেখা মিলবে। তবে বর্ষা শেষ মৌসুমে। কয়েকটি গ্রাম পার হলেই ইউনিয়নের চরমানাইর হাট। হাটটি কয়েকবার নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আগের মত এখন আর সুখ্যাতি নেই। কয়েকটি দোকানের সমন্বয়ে আজও হাটের ঠিকানা ধরে রেখেছে এলাকার কতিপয় ব্যবসায়ী। যাইহোক ওই হাট থেকেই আতিকুর রহমানের স্বেচ্ছাসেবী মনের উদ্যোগে খালাখন্দের উপর দিয়ে নির্মান করা হয়েছে বালু-মাটির রাস্তা। বেশ ভালোই লাগবে গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে আতিকুরের রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে। রাস্তার দু’ধারে কিছু লোক বিভিন্ন প্রজাতের ফলজ বৃক্ষ রোপন করেছে। আম,কলাসহ আরও অন্য সবজি পাওয়া যাবে। হাটতে হাটতে চরমানাইর হাট এ তখন। স্বপ্ন দেখা আতিকুরের রাস্তা শুরু হলো। সবুজ গ্রাম আর সবুজ মনের মানুষের স্বপ্নে গড়ে উঠছে এক অন্য চর। এরপর চরমানাইর হাট, চরবন্দর খোলা,ঈদ গ্রাম। নালের মধ্যদিয়ে তৈরি করা দু’তিন টি বালু মাটির দিয়ে ভরাট রাস্তা চোখে পড়লো। প্রায় ৮০০মিটার বালু মাটির রাস্তা নির্মিত করা হয়েছে।
সরজমিনে আরও দেখা যায়, চরমানাইর ইউনিয়নের চর বন্দর খোলা গ্রামের কাঁচা রাস্তা নির্মাণ হওয়ায় প্রতিদিন ওই রাস্তা দিয়ে মানুষজনের দীর্ঘদিনের যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হয়েছে। গ্রামের বেশীর ভাগ জমিই আতিকুর রহমানের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর দিয়ে কয়েক গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য সম্প্রতি তিনি রাস্তার জায়গা নির্ধারণ করে দেন। পরে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে এক মাসের ব্যবধানে রাস্তাটির মেরামত কাজ শুরু করে দেন। প্রতিনিয়ত ওই রাস্তা দিয়ে দুই গ্রামের শত শতপরিবারের লোকজন যাতায়াত করছে। ৪নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য রশিদ মাতুব্বর বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও সরকারি ভাবে রাস্তা করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি। পরে এলাকার জনসাধারণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এলাকাবাসীকে ডেকে আতিকুর নিজ অর্থ দিয়ে মাটির রাস্তা তৈরি করার কথা জানান। পরে দুই এলাকার নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে মতামত দেওয়ায় তিনি এ রাস্তা নির্মান করেন।
মোঃ আতিকুর রহমান বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। কতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকবো। দুই একটি ভালো কাজ করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এ কথা মাথায় রেখে মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, চরবাসী আমার মা,বাবা,ভাই,বোন এবং আমি চরবাসীর সন্তান।