২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার | বাংলা কনভার্টার
মোঃ সাব্বির হাসান.
ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার বেগম কাজী জেবুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক রহিমা খাতুন কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নারী শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর রাষ্ট্রীয় পদক “বেগম রোকেয়া পদক ২০২২” এ ভূষিত হন। আজ ৯ই ডিসেম্বর-২০২২ তারিখে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেগম রোকেয়া পদক-২০২২ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জনাব রহিমা খাতুনকে বেগম রোকেয়া পদক-২০২২ প্রদান করেন।
নারী জাগরণ ও রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত হওয়ায় সদরপুর উপজেলার নানা শ্রেণিপেশার লোকজন রহিমা খাতুন কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার সতেররশি গ্রামের কাজী খলিলুর রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন। রহিমা খাতুন দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর শিক্ষকতা পেশার পাশাপাশি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সমাজসেবামূলক বহুবিধ কর্মকাণ্ডে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সমাপ্ত করে ১৯৮১ সালে নারীশিক্ষা নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের মধ্যে অদম্য ইচ্ছাশক্তির উৎসমুখ খুলে দিতে তিনি প্রাণান্তকর পরিশ্রমে ব্রতী হয়েছেন ।
সদরপুর উপজেলায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত নারী শিক্ষার একমাত্র সাফল্যকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেগম কাজী জেবুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৮০সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সময়েই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে ২২শে ডিসেম্বর ১৯৮১ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে কর্মজীবনে যোগদান করেন।
যোগদান করেই সদ্য প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি কে দাঁড় করানোর জন্য শুরু করেন উপজেলার পশ্চাৎপদ জায়গায় বিচরণ করেন শিক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য। তৎকালিন কাঁদা মাটি এবং জরাজীর্ণ রাস্তা পায়ে হেটে গ্রামের পর গ্রাম থেকে পঞ্চশ শ্রেণি পাশ করে ঝড়ে পড়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ঘর থেকে বের করে স্কুলমুখী শুরু করেন। ৮২’থেকে ৮৭সাল পর্যন্ত এক নাগাড়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিবন্ধিকতার মধ্যে দিয়ে স্কুল-সমাগম করেন শিক্ষার্থীদের দিয়ে। তৎকালিন সদরপুর উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা ছিলো খুবই চ্যালেঞ্জিং। শতকরা ২৫ভাগ হার হিসাবে গন্যহত তৎকালিন শিক্ষার হার। এরপর তার উদ্যমতার কারনে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বিদ্যালয়টির। একের পর এক ভালো রেজাল্ট আর শিক্ষার্থীদের বাবা মায়ের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে এক অনন্য নাম হিসাবে স্বকৃতিপ্রাপ্ত রয়েছে রহিমা খাতুন এর।
রহিমা খাতুন একজন শিক্ষানুরাগী নারী। নারী শিক্ষার পাশাপাশি আরও যে সব কর্মক্ষেত্রে পেয়েছেন সম্মামনা, ফরিদপুর শ্রেষ্ট যুবকর্মী পুরস্কার ১৯৮৭-১৯৮৮ যুব উনয়ন্ন অধিদপ্তর ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক সমাজসেবা কাজে, ২০০৩সালে শিক্ষা,সংস্কৃতি ও সমাজ সেবায় অবদান রাখায় বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন সম্মামনা, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সমাজ উন্নয়নে অবদান ২০১৪সালে সদরপুর উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মান, ২০১৭সালে শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক ক্যাটাগারীতে যুব কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর হতে জেলা যুব পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৮৭সালে সদরপুর মহিলা কলেজের প্রথম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান, ১৯৮৪ থেকে ২০২২ইং পর্যন্ত সদরপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী’র সাধারণ সম্পাদক ও সহসভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য উপজেলা শিক্ষাকলা একাডেমী সম্মামনা পত্র, উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ট শিক্ষক, একাধিকবার মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি,পল্লী বিদ্যুায়ন বোর্ডের মহিলা উপদেষ্টার সনদ, বাংলাদেশ স্কাউট কর্তৃক মেডেল এর মেরিট সনদ ও লং সার্ভিস এ্যাডওয়ার্ড সনদ,বাল্য বিবাহরোধ, পরিবার পরিকল্পনা,নেশাকে না বলা কার্যক্রম স্বীকৃতিপত্র, প্রতিবন্ধি শিশুদের নিয়ে কাজ করা স্বীকৃতি পত্র, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সদরপুর উপজেলা শাখার সদস্য,মহিলা সস্পাদিকা। এছাড়াও ক্রীড়া অঙ্গনে ২০০৮সাল থেকে বর্তমানে রয়েছেন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) সদরপুরের ইউসিসিএ চেয়ারপার্সন এবং সদরপুর উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষা জীবন প্রসঙ্গে জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাগুরা,এস.এস.সি সেবা সংঘ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,যশোর, এইচ,এস,সি, মহিলা কলেজ, যশোর, স্নাতক, কলেজ অব এডুকেশন,যশোর,স্নাতকোত্তর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। পারিবারিক জীবনে, তার পিতা মৃত আঃ সামাদ শিকদার একজন সরকারি চাকুরীজীবি ছিলেন, দেশের বিভিন্নস্থানে সুনামের সহিত চাকুরী করেছেন। এরপর ১৯৮২সালে সদরপুর উপজেলার সম্ভ্রান্ত কাজী আলতাপ হোসেন এর পুত্র কাজী খলিলুর রহমানের সাথে বিবাহ হয়। রহিমা খাতুনের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে কাজী রকিবুল হাসান, বর্তমানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ী জেলার সহকারী পরিচালক হিসাবে কর্মরত রয়েছে। ছোট ছেলে কাজী তাওহীদ, ব্যাক ইউনিভাসিটিতে এলএলবি অনার্স শেষ বর্ষ, একমাত্র কন্যা উম্মুল খায়ের ফাতেমা (তিথি) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর মনিটরিং এন্ড ইভাল্যুয়েশন এ্যাসোসিয়েট হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
পদক ভূষিত রহিমা খাতুন তিনি জানান, আমি সব সময়ই মানুষের কল্যানে কাজ করে থাকি। বিশেষ করে আমি শিক্ষক হওয়ায় সদরপুরের নারী শিক্ষার কোনো উন্নয়ন না থাকার কারনে আমি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি নারীদের শিক্ষার জন্য এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে যেনো তারা দাঁড়াতে পারে। কর্মের গুনেই আজ রাষ্ট্র আমাকে স্বৃকৃতি স্বরুপ এ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। যতদিন বেঁচে আছি নারী শিক্ষার জন্য এবং সমাজের মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।