১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার | বাংলা কনভার্টার
রাজধানীর ধানমন্ডিতে স্কুটি চালিয়ে নিজের দুই বাচ্চাকে প্রায়দিনই স্কুলে পৌঁছে দিতে যান এক নারী। প্রায়দিনই তার সঙ্গে দেখা হয় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। তবে গত ১৩ মার্চ ওই নারীকে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়।
এক ট্রাফিক পুলিশ তাকে উত্ত্যক্ত করেন। তিনি বাসচালকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মারেন ভাই মারেন, মেয়ে মানুষ আবার স্কুটি চালায়।’
রাজধানীর ধানমন্ডির ১১/এ- এর সুলতানা কামাল স্টেডিয়ামের পাশে সানিডেল স্কুলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
খোদ ওই নারী (তানিয়া আলম) সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ওই ঘটনার পর স্ট্যাটাস দেন। তিনি অভিযোগ করেন, থানায় ও ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে গিয়েও কোনো সুরাহা পাননি। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার পর রীতিমতো ভাইরাল হয় তা। তার মন্তব্য, ‘নারীদের স্কুটি চালানো কি অপরাধ?’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত ওই ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি ট্রাফিকের এটিএসআই।
এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই ট্রাফিক পুলিশ সদস্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এরপরও আমরা লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি ওই নারীকে। তিনি অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তানিয়া ইসলাম নামে ওই নারী অভিযোগ করে স্ট্যাটাসে বলেন, “বাচ্চাদের স্কুলে দিতে যাবার সময় এক ট্রাফিক পুলিশ বলছে ‘মারেন ভাই মারেন একে তো মেয়ে মানুষ তার ওপর স্কুটি চালায়, ডেইলি দুটা বাচ্চা নিয়ে স্কুলে দিতে আসে, মারেন, মারলে কোন সমস্যা নাই। আবার বলে, ‘আমি বলছি মারলে সমস্যা নাই মারেন’।
এই হচ্ছে আজ আমাদের দেশের পুলিশের চেহারা, যাদের উচিত জনগণকে কেউ মারলে রক্ষা করা, তারা বলে মারেন কোন সমস্যা নাই, আমি আছি ???
মারার কারণ, প্রথমতঃ আমি মেয়ে মানুষ (!), তার ওপর স্কুটি চালাই (মেয়ে মানুষের এত সাহস), তার ওপর Daily দুটা বাচ্চার স্কুলে স্কুটি করে আনা-নেয়া করি... পুলিশ নামক পুরুষের তা সহ্য হচ্ছে না…
এখন যে থানায় জিডি করতে যাব, তারও কোনো লাভ হবে বলে মনে হয় না... ।”
ওই নারী স্ট্যাটাসের কমেন্টস অপশনে মন্তব্য করেন, “আমি গিয়েছিলাম জিডি করতে ৩২নং এর পুলিশ ফাঁড়িতে। গিয়ে দেখি আমার কথা সবাই জানে! ওখানে ছিলেন সহকারী কমিশনার আকরাম হাসান টুকু।
তিনি বললেন, জিডি করে লাভ নাই কারণ পুলিশই তো তদন্ত করে! কিছু পাওয়া যাবে না! তার চেয়ে উনি দেখবেন ব্যপারটা! তারপর সাইফুলকে (সেই ট্রাফিক পুলিশ) ডাকা হলো, তিনি বললেন, তিনি নাকি আমাকে কিছু বলেননি, শুধু সাবধানে স্কুটি চালাতে বলেছেন!
তখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার ছবি তোলার আগে, আমি যে আপনাকে বললাম, ভাই আপনি তো মানুষ মারার সুপারি নিছেন, আসেন আপনার একটা ছবি তুলি, সেটা কেন বললাম তাহলে!!! আর সব ড্রাইভার আপনার কথা শুনে কেন হাসল? আর ভালো উপদেশ দিলে কেউ জিডি করতে আসে??? তখন কোনো উত্তর নাই!!! সবাই এক সাথে মিথ্যা বলে??? এত মিথ্যা মানুষ কীভাবে বলে, বলার মতো কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না!!!”
অভিযুক্ত এটিএসআই সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি সাধারণ ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। কাজ করছি ধানমন্ডিতে। আমার ডিউটি সানিডেল স্কুলের সামনে সব সময় থাকেও না। তার সঙ্গে আমার শত্রুতার সম্পর্কও নয়। তার সাথে আমার সচারচর দেখাও হয় না। গত ১৩ তারিখ কার সাথে কী হয়েছে জানি না। কিন্তু তিনি গতকাল ১৫ মার্চ সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে ছবি তুলে নিয়ে যান। আমিও তার পেছনে থেকে ভিডিও করে রাখি।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আকরাম হাসান টুকু জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই নারী গতকাল আমার অফিসে এসেছিলেন। আর ঘটনা গত ১৩ তারিখের। আমি বলেছি, লিখিত অভিযোগ করুন। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি জিডি করতে চান। বললাম করেন কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু তিনি জিডি কিংবা অভিযোগ কোনোটাই করেন নাই।’