১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার | বাংলা কনভার্টার
প্রিয় লেখক,কবি সাহিত্যিক,সাংবাদিক সাদত আল মাহ্মুদ এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে তাকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিনন্দন শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তার কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক সমৃদ্ধ সুন্দর সাফল্যে মন্ডিত হোক এই কামনায়। তিনি একজন সাংবাদিক,নাট্যকার, উপন্যাসিক,শিশু সাহিত্যিক। তিনি উচিতবাদী, চরম কৃতজ্ঞ,সাদামাটা সহজ-সরল চির সবুজ মনের মানুষ। আমি বারংবার মোহগ্রস্থ হয়েছি তাঁর বিচক্ষণতা, প্রিসাইন্স,কো-অপারেটিভ আচরণ ও মানবিক গুণাবলি দেখে। বলছি, জনপ্রিয় উপন্যাস 'রাজাকার কন্যা'র নন্দিত লেখক সাদত আল মাহমুদ -এরকথা আগামী ১ নভেম্বর নন্দিত লেখক সাদত আল মাহমুদ -এর জন্মদিন। তিনি ১৯৭৬ সালের ১ নভেম্বর টাংগাইল জেলা গোপালপুর উপজেলার দুবাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মো.আব্দুর রাজ্জাক। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি মেঝো। স্ত্রী ও কন্যা সায়মা মাহমুদকে নিয়ে ঢাকায় তাঁর পারিবারিক আবহ। সাদত আল মাহমুদ লেখালিখি শুরু করেন ১৬ বছর বয়স থেকেই। তখন নবম কি দশম শ্রেনিতে পড়েন। স্কুলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কবিতা লিখতেন। এ ছাড়া দেয়াল পত্রিকা, বিভিন্ন ম্যাগাজিনে তাঁর লেখা প্রকাশিত হতো। ১৮ বছর বয়সে তিনি "শেষ বেলায়" নামক প্রথম উপন্যাস লিখেন যদিও তা মলাট বন্দী করেন নি। লেখক হিসেবে সাদত আল মাহমুদ এর মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় বাঙালি জীবন ছবির নিবিড় নিপুণ কারিগরের ভুমিকা। দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ এক শুভ্রাত্মার মানুষ সাদত আল মাহমুদের আজ ৪৩ তম জন্মদিন। ৪৩ বছর পেরিয়ে এখনো তিনি মনে-প্রাণে ১৮ বছরের তরুণ। তিনি প্রায় ২ দশক ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে লিখে যাচ্ছেন। মধ্যবিত্তের ছোট ছোট সুখ আর বড় বড় দুঃখকে পরম আদরে সাহিত্য বানিয়েছেন তিনি। আর সেইসব আদরমাখা লেখা পড়ে এই প্রজন্মের অনেকের চোখে জল ঝরেছে। সমাজের বড় বড় অসংগতি খুব সূক্ষভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর কথাসাহিত্যে। চিতার আগুনে উপন্যাসটি সাদত আল মাহমুদের প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ। দীর্ঘদিন নাটক লেখালেখির সাথে জড়িত থাকার কারণে উপন্যাস তেমন একটা লেখা হয়ে ওঠেনি। নিয়মিত উপন্যাস লেখা তাঁর অদম্য ইচ্ছা। উপন্যাসের পাশাপাশি ছোটগল্প, রম্যরচনা, প্রবন্ধ ও ভৌতিক গল্প লিখেন। প্রাঞ্জল ভাষা, স্বচ্ছ বিচার-বিশ্লেষণ আর সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণশক্তি লেখাকে কী পরিমাণে শাণিত করে তোলে সাদত আল মাহমুদের উপন্যাস পড়লেই বুঝবেন। সাদত আল মাহমুদ বাজারী লেখক নন।তিনি বাজার ধরার জন্য বই লিখেন নি।তিনি সেলিব্রেটি লেখক হতেও চান না।তিনি লেখার মাধ্যমে সমাজ বদলাতে চান।তাঁর উদ্দেশ্য সমাজের অসংগতি ও সমস্যাগুলো তাঁর উপন্যাস ও গল্পের ফাঁকে ফাঁকে তুলে ধরা যাতে পাঠক এই সমস্যাগুলো পড়ে সাহিত্যরসের মাধ্যমে মনে ধারণ করে সমস্যাগুলো সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। সব ঠিক থাকলে তিনি ২০১৯ সালের বইমেলায় "ঘোড়া" নামের একটা উপন্যাস নিয়ে হাজির হবেন পাঠকদের সামনে।ঘোড়া উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছে একজন সাংবাদিক। তিনি বিভিন্ন জায়গায় সংবাদ সংগ্রহের জন্য ঘোড়া নিয়ে যান।ঘোড়ার কপালে 'প্রেস' লেখা একটা স্টিকার থাকে।ঘোড়া যেখানে- সেখানে, অফিস -আদালতে মল ত্যাগ করার কারণে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে স¤পাদকের কাছে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসতে থাকে। এই ঘোড়া পাগলামীর কারণে একদিকে সংসারে ভাঙ্গনের সুর অন্যদিকে চাকুরী যায়যায় অবস্থা।এ রকম বেদনাদায়ক ও ব্যতিক্রমধর্মী কাহিনী নিয়ে আগামী বইমেলায় আসছে সাদত আল মাহমুদের 'ঘোড়া' উপন্যাসটি। আর শিশুদেও জন্য আসছে যোগেন্দর গল্পের ঝুলি সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৯৭সালে ঢাকার পাক্ষিক তৃতীয় মাত্রা ও পোলট্রি বিচিত্রা খামার পত্রিকার মাধ্যমে। এরপর তিনি দৈনিক সমকাল,জনকণ্ঠ, মুক্তকন্ঠ ,খোলা কাগজ,বাংলাদেশের খবর,সকালের খবর,প্রতিদিনের সংবাদ, ইনকিলাবসহ দেশের প্রধান প্রধান পত্রিকায় বিভিন্ন সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করে। সাদত আল মাহমুদ ১৯৯৭ এর দিকে নাটক লেখার কাজ শুরু করেন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি নাটক রচনা করেছেন তিনি। তাঁর লেখা নাটকগুলো মধ্যে শেকড়ের টানে অন্যতম। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনেও দীর্ঘদিন নাট্যকার হিসেবে কাজ করেছেন।এই আল্ট্রামর্ডান যুগে মানুষ এখন আর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনা।এক ভদ্রলোক (আমার কাছে অভদ্র) সেদিন বলেই পেলেন,"কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলে নাকি ইজ্জতের ক্ষতি হয়"।এ ব্যাপারে সাদত আল মাহমুদ স¤পূর্ণ ভিন্ন।কেউ যদি তাঁর সামান্যতম উপকারও করে তিনি মাসে মাসে, চান্দে চান্দে উপকারীর উপকার স্বীকার করেন। জনসম্মুখে উপকারীর প্রসংশা করেন। বইয়ের পাঠকদের বেলায়ও সাদত আল মাহমুদ বেশ সাবলীল ও সচেতন। সাদত আল মাহমুদের লেখা ভিন্ন ধর্মী উপন্যাসের মধ্যে- বেশ সমাদৃত,জনপ্রিয় ও উল্লেখ্য যোগ্য উপন্যাস গুলো হলো- মুক্তিযুদ্ধের বাস্তব কাহিনি নিয়ে চমন-প্রকাশ প্রকাশনীর প্রকাশনায় “রাজাকার কন্যা", সমকালীন উপন্যাস নিয়ে অ্যাডর্ন পাবলিকেশন প্রকাশনীর প্রকাশনায় “চিতার আগুনে”, কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশনায় “প্রসব বেদনা", রোমান্টিক প্রেম কাহিনি নিয়ে একাডেমি প্রেস এন্ড পাবলিশার্স লাইব্রেরী প্রকাশনীর প্রকাশনায় “রমনীদ্বয়",এছাড়াও কল্প কাহিনি নিয়ে শিশুদের জন্য অক্ষর সংস্কৃতি প্রকাশনী প্রকাশ করেছেন "ভূত ধরার অভিযান"। তাঁর প্রত্যেকটা বই-ই জনপ্রিয় ও পাঠক প্রিয়। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,৩০ লক্ষ প্রাণের এবং ২ লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত হরণের বিনিময়ে আমরা এই দেশ পেয়েছি। সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল কেটেছেন। দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা যে আজ স্বাধীনতা ভোগ করছি, দেশটা কিভাবে পেলাম তার সঠিক ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে হবে। আর সেই দায়িত্ববোধ থেকেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের জন্য আমি "রাজাকার কন্যা" বইটি লিখেছি।নতুন লেখক স¤পর্কে তিনি বলেন,নতুনদের সুযোগ দিতে হবে। সক্রেটিসর,শেক্সপিয়ার, বার্ণা'শ, রবীন্দ্রনাথ ,শরৎচন্দ্র,হুমায়ুন আহমেদ,আখতারুজ্জামান ইলিয়াসদের পূনর্জম্ম হবে না। যদি নতুন লেখকের জন্ম না হয় তাহলে বাংলা সাহিত্য দন্যদশায় পড়ে যাবে।নিজের লেখালেখি স¤পর্কে তিনি বলেন, "আমি নিজেকে লেখক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি যদি লেখক রয়েলিটি দিয়ে কোন রকমেও সংসার চালাতে পারি তাহলে সাংবাদিকতা একেবারে ছেড়ে দিয়ে পুরোপুরি লেখালিখিতে মনোনিবেশ করবো।লেখালেখি আমার রক্ত কণিকার সাথে মিশে গেছে তাই তা আমি ছাড়তে পারবো না"। লেখালেখির উৎসাহটা মূলত কল্পনা সূত্রে প্রাপ্ত। তিনি সারাদিন যা দেখতেন রাতে তা উজ্জ্বল আলোর মতো চোখদ্বয়ে খেলা করতো। নদীর ঢেউ,বাতাসের সাথে পাকা ধানের খেলা,নির্জন দুপুরে ঘুঘু পাখির ডাক,দল বেঁধে পাখির উড়ে যাওয়া,ছোটদের ঘুড়ি উড়ানো এই সব তিনি খাতায় লিখে রাখতেন।এভাবেই লেখার নেশা তাঁকে চেপে ধরে। এরপর পেয়েছেন সমসাময়িক সমাজের বিদ্বৎজনের সান্নিধ্য।এই ভাবেই লেখালেখির জগতে তাঁর আগমন।তিনি জীবনে বই পড়েছেন খুবই কম।তাঁর এই ৪৩ বছর জীবনে তিনি মাত্র ৩০ থেকে ৩২ টি বই পড়েছেন!একজন লেখকের জন্য এটা হাস্যকরই বটে!তাঁর লেখক হওয়ার পেছনের কারিগর তাঁর মা।মায়ের উৎসাহেই তিনি আজ কালজয়ী ছয়টি বইয়ের জনক। আর একটু বলেই লেখাটি শেষ করছি। নিজের শৈশবের কথা বলতে গিয়ে সাদত আল মাহমুদ বলেন, আমার জন্ম টাঙ্গাইলের একটি গ্রামে।অন্য দশজন ছেলের মতোই সারাদিন মাঠে মাঠে ঘুরতাম,খেলতাম, নদীতে সাঁতার কাটতাম,ডু-ডু খেলতাম। আবার যদি এই দিনটা ফিরে পেতাম! কত মজাই না হতো! সাদত আল মাহমুদ আর দশজন লেখকের চেয়ে আলাদা। অনন্য।বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র লেখক যিনি ছাত্র-ছাত্রী মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য ১বছরে দুই লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকার বই বিতরণ করেছেন। অন্য কোন লেখক নিজের টাকায় এই কাজটি করেছেন বলে আমার জানা নেই। জন্মদিনে প্রিয় লেখক, প্রিয় মানুষ সাদত আল মাহমুদকে শুভেচ্ছা জানাই। ভাল থাকবেন আপনি। বেঁচে থাকুন আরও অনেক বছর। শুভ জন্মদিন।