২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার | বাংলা কনভার্টার
১৯৭৬ সালে ৩.৫৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দিতে উপজেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের যাত্রা শুরু হয়। এক সময় এই অঞ্চলের মৎস্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অন্য অঞ্চলে সরবরাহ করা এই মৎস্য খামারটি দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকার পর আবার খুড়িয়ে খুড়িয়ে যাত্রা শুরু করেছে। স্থানীয়দের দাবি খামারটির সকল সমস্যা সমাধান করলে এই খামারের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভাল অবদান রাখবে। গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, বহরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ৩.৫৪ হেক্টর জমির উপর ১.৪২ হেক্টর পুকুরসহ সীমানা প্রাচীরের মধ্যে মৎস্য বীজ খামারের কার্যক্রম চলছে। ছোট-বড় ৯টি পুকুরের মধ্যে ৭টি পুকুরে আংশিক আকারে পোনা মাছ চাষ করা হচ্ছে। আবাসিক ভবন বয়সের ভারে ভেঙে পড়ার উপক্রম। সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকছেন খামারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সূত্রে জানা যায়, বালিয়াকান্দি উপজেলার আমিষের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে এডিপির সহায়তায় হ্যাচারির কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু অজ্ঞাতকারণে নামমূল্যে ১৯৯৭ সালে ব্যক্তি মালিকানায় ১৫ বছরের জন্য লিজ প্রদান করা হয়। যা এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। লিজ প্রদানের পর থেকেই ধীরে ধীরে খামারটির অবকাঠামো নষ্ট হতে থাকে। ব্যক্তি লাভের আশায় খামারটি বিভিন্ন সমস্যা জর্জরিত হয়ে একপর্যায়ে হ্যাচারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সালে লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে পুনরায় সরকারের অনুকূলে আসে। ২০১৩ সাল থেকে বার্ষিক উৎপাদন পরিকল্পনা অনুসারে সকল কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর বৃহত্তর ফরিদপুর মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালে স্থাপনা প্রকল্প হতে নতুন একটি অফিস ভবন, হ্যাচারি পুকুর পুন:খনন, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১০ একর জমিতে নির্মিত খামারের ছোট-বড় ৯টি পুকুর রয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পুকুরগুলো শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। ফলে মাছ চাষে কাঙ্খিত সুফল পাওয়া যায় না। এ খামারে দায়িত্ব পালনে ৫টি পদ থাকলেও ব্যবস্থাপক রবিউল করিম ও অফিস সহকারী মফিজুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে অফিস সহকারী মফিজুর রহমান আগামী ৩০ জুন অবসরে চলে যাবেন। ক্ষেত্র সহকারী, অফিস সহায়ক ও হ্যাচারি পরিচায়ক পদ শূন্য রয়েছে। খামারের পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়া, আবাসিক অবকাঠামো জরাজীর্ণ, পর্যাপ্ত সময় বিদ্যুৎ না থাকায় খামার থেকে আশানুরুপ আয় হচ্ছে না।মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের অফিস সহকারী মফিজুর রহমান জানান, উপজেলার উন্মুক্ত জলাশয়ে যত মাছ অবমুক্ত করা হয় এর সিংহ ভাগই এক সময় এখান থেকে সরবরাহ করা হতো। মাঝে হ্যাচারিটি বন্ধ থাকায় পুনরায় আবার নতুন রূপ পেতে সময় লাগবে। তবে খুবই শিগগির সরকার নির্ধারিত রাজস্ব পূরণের পাশাপাশি উপজেলার মৎস্য চাহিদা পূরণে হ্যাচারিটি ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। উপজেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক রবিউল করিম জানান, বর্তমানে খামারের পুকুরে পানি একেবারেই কম, অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ না থাকার কারণে পর্যাপ্ত পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবাসিক ভবনটির অবস্থা খুবই খারাপ, পুকুরগুলো দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন। উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা রবিউল হক জানান, সরকার ইতোমধ্যে মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি সচলের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে দীর্ঘদিন বেহাত থাকায় মাছ চাষের উপযোগী করতে সময় লাগছে। আশা করছি দ্রুত সকল সমস্যার সমাধান হয়ে আবারও প্রাণ পাবে মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি।